সোনালী ব্যাংক পিএলসি: সংক্ষিপ্ত পরিচিতিমূলক তথ্য

বাংলাদেশের রাষ্ট্র মালিকানাধীন সর্ববৃহৎ বাণিজ্যিক ব্যাংক সোনালী ব্যাংক লিমিটেড। বাংলাদেশ ব্যাংক্স (ন্যাশনালাইজেশন) অর্ডার ১৯৭২, রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ নম্বর ২৬, ১৯৭২ অনুসারে ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান, ব্যাংক অব বাহ্ওয়ালপুর এবং প্রিমিয়ার ব্যাংক নিয়ে ‘সোনালী ব্যাংক’ প্রতিষ্ঠা লাভ করে। ব্যবস্থাপনা দক্ষতা ও সেবার মান উন্নয়নের মাধ্যমে ব্যাংকিং কর্মকান্ডকে আরো গতিশীল করার নিমিত্ত যৌথ মূলধনী কোম্পানী ও ফার্মসমূহের নিবন্ধকের পরিদপ্তরে ০৩ জুন, ২০০৭ তারিখে “সোনালী ব্যাংক লিমিটেড” নামে কোম্পানী নিবন্ধন এবং ৫ জুন, ২০০৭ তারিখে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক সোনালী ব্যাংক লিমিটেড এর অনুকূলে ব্যাংকিং লাইসেন্স প্রদানের পর গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার ও সোনালী ব্যাংক লিমিটেড-এর মধ্যে “ভেন্ডর এগ্রিমেন্ট” সম্পাদনপূর্বক ১৫ নভেন্বর, ২০০৭ তারিখ হতে সোনালী ব্যাংক লিমিটেড কোম্পানী হিসেবে ব্যাংকিং কার্যক্রম শুরু করে।

ব্যাংক ব্যবসার প্রসার ঘটানোর পাশাপাশি দেশের আপামর জনসাধারণকে বিনিয়োগে উৎসাহিত করা এবং সুদৃঢ় অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রয়াসে “সোনালী ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড” নামে সাবসিডিয়ারী কোম্পানী গঠনপূর্বক ১৪ সেপ্টেম্বর ২০০৯ হতে মার্চেন্ট ব্যাংকিং এর ব্যবসায়িক কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে।

২৯ জুন, ২০১০ তারিখ থেকে ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, খুলনা ও বগুড়ায় ইসলামী ব্যাংকিং উইন্ডোর মাধ্যমে শরীয়াহ্ ভিত্তিক ইসলামী ব্যাংকিং কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। তাছাড়া “সোনালী ফাউন্ডেশন” গঠনের মাধ্যমে কর্পোরেট সোশ্যাল রেসপন্সিবিলিটি এর দায়িত্ব পালন করা হচ্ছে।

সোনালী ব্যাংক লিমিটেড এর শাখার সংখ্যা বর্তমানে ১২৩২টি। এর মধ্যে দেশের অভ্যন্তরে ১২৩০টি এবং বিদেশে ২টি শাখা রয়েছে। দেশের অভ্যন্তরে ১২৩০টি শাখার মধ্যে গ্রামাঞ্চলে রয়েছে ৬৯৫টি এবং অবশিষ্ট ৫৩৫টি শহরাঞ্চলে। সকল শাখার মধ্যে ৪৮টি শাখার (অথরাইজড ডিলার বা এডি শাখা) মাধ্যমে বৈদেশিক বাণিজ্য কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। বিদেশে ২টি শাখার মধ্যে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কোলকাতায় ১টি ও শিলিগুড়িতে ১টি। ব্যাংকের প্রশাসনিক ও ব্যবসায়িক কার্যাদি সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের নিমিত্ত রয়েছে ১৮টি জেনারেল ম্যানেজার’স অফিস, ৬৯টি প্রিন্সিপাল অফিস । প্রধান কার্যালয়ের ৪৭টি বিভাগের মাধ্যমে ব্যাংকের সার্বিক কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। সোনালী ব্যাংকে কম-বেশী ২.৪৭ কোটি বিভিন্ন ধরনের গ্রাহকের হিসাব রয়েছে।

ব্যাংকের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের কাজে দক্ষতা আনয়নের জন্য প্রশিক্ষণের বিকল্প নেই। প্রশিক্ষণ প্রদানের জন্য ঢাকায় “সোনালী ব্যাংক স্টাফ কলেজ” সহ চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, বগুড়া ও ময়মনসিংহে ১টি করে প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট রয়েছে।

আন্তর্জাতিক ব্যাংকিং অঙ্গনে সোনালী ব্যাংক লিমিটেড এর কার্যক্রম সম্প্রসারণের লক্ষ্যে ১৯৯৪ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সোনালী এক্সচেঞ্জ কোম্পানী ইনকর্পোরেটেড (সেকি) নামে একটি পূর্ণাঙ্গ সাবসিডিয়ারী কোম্পানী স্থাপন করা হয়। ব্যাংকের নিজস্ব অর্থায়নে উক্ত এক্সচেঞ্জ কোম্পানীর ৯টি শাখা রয়েছে।

সোনালী ব্যাংক লিমিটেড ও গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের যৌথ মালিকানায় ২০০১ সাল থেকে যুক্তরাজ্যে সোনালী ব্যাংক (ইউকে) লিঃ এর কার্যক্রম শুরু হয়। বর্তমানে যুক্তরাজ্যে এর ৬টি শাখা রয়েছে।

সৌদি আরবের রিয়াদ ও জেদ্দা এবং কুয়েত এ ব্যাংকের নিজস্ব প্রতিনিধি অফিস রয়েছে। মালয়েশিয়ার ‘মে ব্যাংক’ ও IME(M), SDN, BHD-এর মাধ্যমে সোনালী ব্যাংক লিমিটেডের সহযোগিতায় মালয়েশিয়ায় কর্মরত বাংলাদেশীদের প্রেরিত অর্থ দেশে আসছে। কোন শাখায় হিসাব নম্বর না থাকা সত্বেও WESTERN UNION, IME, TRANSFAST, EXPRESS MONEY রেমিট্যান্স SPOT CASH, CASH OVER THE COUNTER পদ্ধতিতে এবং অন্যান্য ব্যাংক /EXCHANGE HOUSE -এর রেমিট্যান্সের টাকা পরিশোধ করা হয়। মধ্য প্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশের ৮০ টি ব্যাংক / এক্সচেঞ্জ হাউজের সাথে সোনালী ব্যাংকের রয়েছে রেমিট্যান্স ব্যবসা। বৈদেশিক বাণিজ্যের জন্য ব্যাংকের ৪৮টি অনুমোদিত শাখা এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ৬১৭টি বৈদেশিক করেসপন্ডেন্টস এর মাধ্যমে ব্যাংকের বৈদেশিক বাণিজ্য কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।

ব্যাংকের রয়েছে বিরাট সংখ্যক দক্ষ জনবল। এই জনবল নিয়ে ব্যাংক ব্যবসার উন্নয়ন এর পাশাপাশি দেশের অর্থনৈতিক কর্মকান্ডকে গতিশীল করা আমাদের অন্যতম লক্ষ্য। বর্তমানে সোনালী ব্যাংক লিমিটেড-এ কর্মকর্তা ও কর্মচারীর সংখ্যা মোট ১৮,১১৫ জন। এর মধ্যে কর্মকর্তার সংখ্যা ১৭,০৩০ জন এবং কর্মচারীর সংখ্যা ১০৮৫ জন।

বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থা উন্নয়নে সোনালী ব্যাংক লিমিটেড সর্বক্ষেত্রে আত্মনিবেদিত হয়ে কাজ করে আসছে। জনসাধারণকে সঞ্চয়ে উদ্বুদ্ধকরণে বিভিন্ন ধরনের আমানত প্রোডাক্ট প্রবর্তন করা হয়েছে। দেশের ব্যবসা বাণিজ্যের উন্নয়ন ঘটিয়ে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনে কৃষি ও শিল্প প্রকল্প ঋণ, আমদানী- রফতানী ঋণ, কৃষিঋণ, ক্ষুদ্র ব্যবসা ঋণ, এসএমই ঋণ, ভোগ্যপণ্য ঋণসহ বিভিন্ন ঋণ স্কীমের মাধ্যমে শহর ও গ্রামাঞ্চলের জনসাধারণকে সহায়তা প্রদান করে আসছে।

সোনালী ব্যাংক জনসাধারণের দৈনন্দিন ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনার পাশাপাশি যেসব স্থানে বাংলাদেশ ব্যাংকের শাখা নেই সেসব স্থানে সরকারের পক্ষে সরকারি ট্রেজারী কার্যক্রম পরিচালনা করে।

সোনালী ব্যাংক লিমিটেড সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পেনশন ও অবসরভাতা প্রদান, সরকারী ও বেসরকারী স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বেতনভাতা প্রদান, ছাত্র-ছাত্রীদের বৃত্তি প্রদান, সামাজিক নিরাপত্তাজনিত বিভিন্ন ভাতা প্রদান, সরকারি সঞ্চয়পত্র ক্রয়-বিক্রয়, সরকারি খাদ্যশস্য ক্রয় বিল পরিশোধ, বিভিন্ন সেবামূলক প্রতিষ্ঠানের বিল গ্রহণ, সরকারি রাজস্ব আদায় কার্যক্রম, হজ্জ্ব ও জাকাত ফান্ডের অর্থ গ্রহণসহ সামাজিক কর্মকান্ডের মাধ্যমে আপামর জনগোষ্ঠীকে সহায়তা করে আসছে।